বৃহস্পতিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৬

প্রশ্নোত্তর

 প্রশ্নঃ গনতান্ত্রীক পদ্ধতিতে ইসলাম কায়েমের চেষ্টা করা যাবে কি ?

উত্তরঃ গণতান্ত্রীক পদ্ধতিতে ইসলাম কায়েমের চেষ্টা করা জায়েজ। যে ভাবে আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকি ঠিক সেই ভাবে গণতান্ত্রীক পদ্ধতিতে ইসলাম কায়েমের চেষ্টা করা যায়েজ। ইন্টারনেটে যেমন ভালো মন্দ উভয়ই আছে ঠিক গনতন্ত্রের মধ্যেও ভালো মন্দ উভয়ই আছে। আমরা যেমন ইন্টারনেটের ভালো দিক গুলো গ্রহণ করি আর খারাফ দিক গুলো বর্জন করি ঠিক একই ভাবে আমাদের ইসলামের আলোকে গনতন্ত্রের ভালো দিক গুলো গ্রহণ করা আর খারাফ দিক গুলো কে বর্জনের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা আমাদের সকলের দ্বায়িক্ত।

প্রশ্নঃ সালাতে হাত কোথায় বাধা সূন্নাত?

উত্তরঃ তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় রাসূল সাঃ ألله أكبر ‘আল্লাহু আকবার’ বাক্যটি পাঠ করতেন। এ ছাড়া তিনি অন্য কিছুই পাঠ করতেন না। তাকবীর পাঠ করার সময় তিনি উভয় হাতের আঙ্গুলসমূহ খোলা রেখে এবং কিবলামুখী করে কানের লতি পর্যন্ত উঠাতেন। কাঁধ পর্যন্ত উঠানোর কথাও বর্ণিত হয়েছে। অতঃপর ডান হাতের কব্জি ও বাহুকে বাম হাতের কবজি ও বাহুর উপর স্থাপন করতেন। উভয় হাত রাখার স্থান সম্পর্কে রসূল (সাঃ) থেকে সহীহ সূত্রে কিছুই বর্ণিত হয়নি। তবে ইমাম আবু দাউদ আলী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, সলাতে এক হাতের কব্জিকে অন্য হাতের কব্জির উপর রাখা সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু হাত কোথায় বাধতে হবে এনিয়ে ঝগরা করা কোনো ভাবেই ইসলাম সমর্থন করেনা।

প্রশ্নঃ এসিড বা অন্য কোন দাহ্য পদার্থ দিয়ে ঘাস বা ফসল পোড়ানোয় শরী‘আতে কোন বাধা আছে কি?

উত্তর : ঐ দাহ্য পদার্থে যদি ভূমির উর্বরা শক্তি বিনষ্ট না হয় এবং তাতে অন্যের কোন ক্ষতি না হয়, তাহ’লে কোন বাধা নেই। তবে অকারণে কোন প্রাণী হত্যা বা গাছপালা বিনষ্ট করা নিষিদ্ধ (নাসাঈ হা/৪৩৪৯; ছহীহ আত-তারগীব হা/১০৯২; বায়হাক্বী কুবরা হা/১৮৬১৪) ।

প্রশ্নঃ যে শাসক জনগনেরর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে বা সৈরাচারী আচরন করে সে কি জান্নাতে যেতে পারবে ?
 

উত্তরঃ বিশ্বাসঘাতক শাসক ও সৈরাচারী শাসক সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
مَا مِنْ عَبْدٍ يَسْتَرْعِيهِ اللَّهُ رَعِيَّةً ، يَمُوتُ يَوْمَ يَمُوتُ وَهُوَ غَاشٌّ لِرَعِيَّتِهِ إِلا حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ
“যাকে আল্লাহ তায়ালা জনসাধারণের শাসনকর্তা হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, কিন্তু সে জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং বিশ্বাসঘাতক অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে তাহলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন।” (সহীহ মুসলিম, হা/১৪২)

প্রশ্নঃ অমুসলিমের রান্না খাওয়া যাবে কি?
.
উত্তর : অমুসলিমের রান্না করা খাবার খাওয়ায় কোন বাধা নেই (বুখারী হা/৩৪৪; মুসলিম হা/২৪৯১; আবুদাউদ হা/৪৫১০; মিশকাত হা/৫৮৮৪, ৫৮৯৫, ৫৯৩১) । তবে তাদের যবহকৃত পশুর গোশত খাওয়া যাবে না (আন‘আম ৬/১২১) । এক্ষেত্রে কোন মুসলিম বিসমিল্লাহ বলে যবেহ করে দিলে এবং তারা রান্না করলে তা খাওয়ায় কোন বাধা নেই।

প্রশ্নঃ “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” এর পরিবর্তে “৭৮৬” লেখা কি ঠিক?

উত্তরঃ কিছু লোক আছে যারা আরবী বর্ণমালাগুলোর নির্দিষ্ট মান দিয়ে যোগফল বের করে। তারপর ঐ মান দিয়ে তারা কোনো আয়াত বা দোয়া বা কোনো নাম নির্দেশ করার চেষ্টা করে।
উদাহরণ দিয়ে বলা যায় “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”-এর ‘বা’, ‘আলিফ’, ‘সিন’ এ বর্ণমালাগুলোর মান বসিয়ে তার বের করেছেন ৭৮৬ আবার ৯২ দিয়ে বুঝান মুহাম্মাদ (সা) এভাবে আরো অনেক কিছু। কিন্তু এমন ব্যবহার কোরআন বা সহীহ হাদীসের কোথাও পাওয়া যায় না।
কিছু লোক তর্ক করে যে, আমরা যখন আরবি বর্ণমালা না পাই, তখন দাওয়াতপত্র ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদি ছাপাতে সংখ্যাগুলো লিখি। কিন্তু আমার কথা হলো, আপনি আরবী শব্দটি ইংরেজিতে বানান করে লিখেন। আর যদি মনে করেন সবাই বুঝবেনা তাহলে অনুবাদ লিখতে পারেন। যেমন “পরম করুনাময় দাতা ও দয়ালু আল্লাহ্‌র নামে”. এত সহজ উপায় থাকতে এমন কঠিন ও বিদঘুটে পদ্ধতির প্রয়োজন কি?
আসলে বিভিন্ন সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন ধারনা আমাদের সমাজে দেখা যায়। যেমন পশ্চিমা সমাজে ১৩ সংখ্যাটিকে অপয়া ভাবা হয়। তারা বলে ‘আনলাকি থার্টিন’. আবার তারা ৬৬৬ দ্বারা বুঝায় শয়তান।
আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে চোর, বাটপার, ফটকাবাজদের ৪২০বলা হয়। এর অবশ্য কারণ আছে, ভারতীয় উপমহাদেশের সবদেশেই যদি কোন চোর বাটপার ধরা হয় তাহলে তাকে যে ধারায় শাস্তি দেয়া হয় সেটি পেনাল কোডের ৪২০ নং ধারায় বর্ণীত। তাই যদিও কারণ আছে তবুও অনেকে না বুঝেই বলে।
যারা বলেন যে বিভিন্ন বর্ণের অবস্থানগত মান যোগ করে ঐ শব্দের প্রতিনিধিত্বকারী সংখ্যা বের করেছেন, তাদের আমি সমর্থন করি না।
কারন, একই মান দিতে পারে এমন সংখ্যা দুটি শব্দের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। যার একটি ভালো অন্যটি খারাপ। সে ক্ষেত্রে আপনি কোনটি গ্রহন করেবেন?
উদাহরণ দেই, যদি বলি ইংরেজি বর্ণ B এর মান ১ এবং A এর মান৭ আর ধরুন D এর মান ৪/ এখন যোগ করলে আমরা পাই ১২/ অর্থাৎ BAD (খারাপ)এর সংখ্যাগত মান পেলাম ১২/ এখন G এর মান ২, O এর মান ৩, D এর মান ৪ ধরলে GOOD এর মান কত?দেখুন ২+৩+৩+৪=১২. অর্থাৎ (GOOD)ভালো এর সংখ্যাগত মান পেলাম ১২ ।
এখন আমি ১২ কে ভালো বা মন্দ কোনটা নির্দেশক বলব? যদি প্রথমটি মেনে বলি ১২ একটি মন্দ নির্দেশক তখন পরে আবার দেখলাম সংখ্যাটি যে মান ধরে নেয়া হয়েছে তা ভালকেও নির্দেশ করে।
তাই যারা ‘বিসমিল্লাহ্‌’ কে ৭৮৬ দ্বারা প্রকাশ করেন তাদেরকে বলি, এমন অনেক শব্দ পাবেন যেগুলোর বর্ণের মান যোগ করলে ৭৮৬ পাওয়া যাবে। সেশব্দ বা বাক্যগুলোর কিছু হতে পারে ভালো আবার কিছু হতে পারে খারাপ নির্দেশক।
তাই কোনো মুসলমানকেই সমর্থন করিনা যখন সে ৭৮৬ দ্বারা বিসমিল্লাহ প্রকাশ করে। আশাকরি সবাই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।
প্রশ্নঃ কোন্ কোন্ নবীর নাম জন্মের পূর্বেই রাখা হয়েছে?
.
উত্তরঃ (ক) মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর জন্মের পূর্বেই তাঁর নাম রাখা হয়েছে আহমাদ (সূরা সফঃ ৬)। (খ) ইয়াহইয়া (আঃ) (সূরা মারইয়ামঃ ৭) (গ) ঈসা (আঃ) (সূরা আল ঈমরানঃ ৪৫) (ঘ) ইসহাক (আঃ) ও ইয়াকূব (আঃ) (সূরা হূদঃ ৭১)

প্রশ্নঃ আল্লাহকে পেতে মাধ্যম লাগে কি ?

উত্তরঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমরা তাঁরই প্রশংসা করছি, তাঁর কাছেই সাহায্য চাচ্ছি। আর তার কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমাদের মন্দ কৃতকর্ম, এবং আত্মার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আল্লাহর দরবারে আশ্রয় নিচ্ছি, আল্লাহ তা'আলা যাকে হিদায়াত করেন তাকে গোমরাহ করার কেউ নেই। আর যাকে গোমরাহ করেন তাকে হেদায়াত করার কেউ নেই, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এক আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন মাবুদ নেই, তার কোন শরীক নেই, আর ও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।
স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে মাধ্যম মানার ব্যাপারটা অত্যন্ত বিপজ্জনক বিষয়। পরিতাপের বিষয় যে, অনেক মুসলমানই এ সম্পর্কে পরিষ্কার কোন ধারণা রাখেনা। ফলে আমরা আল্লাহর সাহায্য সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হতে চলেছি, যে সাহায্য করার কথা তিনি কুরআনে তাঁর কাছে আশ্রয় কামনা এবং তাঁর শরীয়তের অনুসরণ করার শর্তে ঘোষণা করেছেন।
আল্লাহ বলেন : “আর মু'মিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব”। {সূরা আর-রূম: ৪৭}
“যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর তবে তিনিও তোমাদের সাহায্য করবেন, এবং তোমাদের পদযুগলে স্থিতি দিবেন”। {সূরা মুহাম্মাদ: ৭}
“আল্লাহর জন্যই যাবতীয় সম্মান, আর তাঁর রাসূলের জন্য, এবং মু'মিনদের জন্য”। {সূরা আল-মুনাফিকূন: ৮}
“তোমরা দুর্বল হয়োনা, এবং তোমরা চিন্তা করোনা, তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা ঈমানদার হও”। {সূরা আলে-ইমরান: ১৩৯}
সৃষ্টি ও স্রষ্টার মাঝে মাধ্যম বলতে কি বুঝায়, এ ব্যাপারে মানুষ তিনটি দলে বিভক্তঃ
একঃ একদল হচ্ছে তারা যারা শরীয়ত প্রণেতা হিসাবে প্রেরিত একমাত্র মাধ্যম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কেও মানতে নারাজ, বরং তারা দাবী করছে, - আর কত জঘন্যই না তাদের এ দাবী - যে, শরীয়ত শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের জন্য, উপরন্ত তারা এ শরীয়ত কে "ইলমে জাহীর" বা প্রকাশ্য বিদ্যা হিসাবে নামকরণ করেছে, তারা তাদের ইবাদতের ক্ষেত্রে কতেক বাজে চিন্তা-ধারণা ও কুসংস্কারকে গ্রহণ করে "ইলমে বাতেন" বা গোপন বিদ্যা নামে চালু করেছে, আর এর দ্বারা যা অর্জিত হয় তার নাম দিয়েছে (কাশ্ফ)। মূলত তাদের এই কাশ্ফ ইবলীশি কুমন্ত্রণা আর শয়তানী মাধ্যম ছাড়া কিছুই নয়, কারণ এটা ইসলামের সাধারণ মুলনীতির পরিপন্থী, এ ব্যাপারে তাদের দলগত শ্লোগান হলোঃ এ কথা (আমার মন আমার রব থেকে সরাসরি বর্ণনা করেছে)।
এতে করে তারা শরীয়তের আলেমদের সাথে ঠাট্টা করছে, এবং এ বলে দোষ দিচ্ছে যে, তোমরা তোমাদের বিদ্যা অর্জন করছ ধারাবাহিক ভাবে মৃতদের থেকে আর তারা তাদের বিদ্যা সরাসরি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী রব এর কাছ থেকে অর্জন করছে।
এ সমস্ত কথা দ্বারা তারা অনেক সাধারন মানুষকে আকৃষ্ট করে তাদের পথভ্রষ্ট করছে। আর শরীয়ত নিষিদ্ধ অনেক কাজ তারা এভাবে জায়েয করেছে যার বিবরণ তাদের কুসংস্কারপূর্ণ বই গুলিতে বিশদভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ফলে এ ব্যবস্থার অবসান কল্পে আলেমগণ তাদেরকে কাফের এবং ধর্ম বিচু্যতির কারণে তাদের হত্যা করার নির্দেশ দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। কারণ তারা জানতনা বা জেনেও না জানার ভান করত যে, ইসলামের প্রথম মূলনীতি হলোঃ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অবতীর্ণ পদ্ধতির বাইরে কেউ আল্লাহর ইবাদাত করলে সে কাফের হিসাবে গণ্য হবে; কেননা আল্লাহ বলেন:
(সুতরাং তারা যা বলছে তা নয় বরং আপনার রবের শপথ, তারা যতক্ষণ পর্যন্ত আপনাকে তাদের মধ্যকার ঝগড়ার মাঝে বিচারক মানবেনা অতঃপর তাদের অন্তরে আপনার ফয়সালার ব্যাপারে কোন প্রকার দ্বিধা দ্বন্দ্বের অস্তিত্ব থাকবেনা, এবং পরিপুর্ণভাবে তা মেনে নিবেনা ততক্ষণ পর্যন্ত তারা ঈমানদার হতে পারবেনা)। {সূরা আন্-নিসা: ৬৫}
আর এভাবেই শরীয়তের ইলমের বিরোধীতা ও তার আলোকে নির্বাপিত করার কাজ শয়তান তাদের মনে সৌন্দর্য মন্ডিত করে দেখায়। ফলে তারা নিশ্চিদ্র অন্ধকারে ঘুরতে থাকে এবং তাদের খেয়াল খুশি মোতাবেক আল্লাহর ইবাদত করতে থাকে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা তাদের যে চিত্র অংকন করেছেন তা তাদের ক্ষেত্রে সঠিক বলে প্রতিয়মান হয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন :
(বলুন: আমি কি তোমাদেরকে আমলের দিক থেকে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্তদের সংবাদ দেব? (তারা হলো ঐ সব লোক) যাদের দুনিয়ার জীবনের সমস্ত প্রচেষ্টা পন্ড হয়ে গেছে, অথচ তারা মনে করত কত সুন্দর কাজই না তারা করছে, তারাই সে সব লোক যারা তাদের রবের আয়াতসমূহ ও তার সাথে সাক্ষাৎকে অস্বীকার করেছে, ফলে তাদের সমস্ত আমল বিনষ্ট হয়ে গেছে, সুতরাং কিয়ামতের দিন তাদের জন্য কোন ওজন স্থাপন করবোনা)। {সূরা আল-কাহ্ফ: ১০৩-১০৫}
এ গ্রুপ শতধা বিভক্ত হয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে লেগেছে, কারণ তারা সহজ সরল পথ থেকে দূরে সরে গেছে, যে পথ ছিল আল্লাহর নেয়ামতপ্রাপ্তদের পথ, অভিশপ্ত বা পথহারাদের পথ নয়।
তাদের সমস্ত গ্রুপই জাহান্নামে যাবে, কারণ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
(আমার উম্মত তিয়াত্তর ফেরকা বা গ্রুপে বিভক্ত হবে, বাহাত্তরটি জাহান্নামে আর একটি জান্নাতে যাবে - যারা আমি এবং আমার সাহাবাগণ যে পথে আছি, তার উপর থাকবে)। হাদিসটি আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ, তিরমিযি সবাই আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আন্হু) থেকে সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন।
দুইঃ যারা মাধ্যম সাব্যস্ত করতে গিয়ে সীমালংঘন করেছে, আর মাধ্যমের ভুল ব্যাখ্যা করে এর উপর এমন কিছু জিনিস চাপিয়েছে, যা চাপানো কক্ষনো জায়েয নয়।
তারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং অন্যান্য নবী ও নেক্কার ব্যক্তিবর্গকে এমনভাবে মাধ্যম মানতে শুরু করেছে যে তাদের বিশ্বাস আল্লাহ তা'আলা কারো কোন আমল এদের মাধ্যম হয়ে না আসলে কবুল করবেননা; কারণ এরাই হচ্ছে তার কাছে যাওয়ার অসীলা। (নাউজুবিল্লাহ)। এতে করে তারা আল্লাহ তা'আলাকে এমন সব অত্যাচারী বাদশাহদের বিশেষণে বিশেষিত করেছে যারা তাদের প্রাসাদে প্রচুর দারোয়ান নিযুক্ত করে রেখেছে যাতে করে কোন শক্তিশালী মাধ্যম ছাড়া তাদের কাছে পৌঁছা কক্ষনো সম্ভব হয়ে উঠেনা।
অথচ আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে বলেন:
(যখন আপনাকে আমার বান্দাগণ আমার সম্পর্কে প্রশ্ন করে তখন (বলুন) আমি নিকটে, আহবানকারী যখন আমাকে আহবান করে আমি তার ডাকে সাড়া দেই, সুতরাং তারা যেন আমার হুকুম মেনে নেয় এবং আমার উপরই ঈমান আনে যাতে করে তারা সৎপথ লাভ করে)
আল্লাহ তা'আলার এ বাণীর সাথে পূর্ব বর্ণিত লোকদের বিশ্বাসের সংগতি কতটুকু?
এ আয়াত ইঙ্গিত করছে যে, আল্লাহর কাছে পৌঁছার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে তার উপর সঠিকভাবে ঈমান আনা এবং তার প্রর্দশিত পথে ইবাদাত করা। দৃশ্যনীয় যে, এ আয়াতে ইবাদতের কথা ঈমানের পূর্বে উল্লেখ করে নেক আমল বা সৎকাজের গুরুত্ব সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে; কেননা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও তার জান্নাত হাসিলের জন্য এটা প্রধান শর্ত।
আল্লাহ তা'আলা কুরআনে অসীলা শব্দের উল্লেখ করেছেন এবং তা দ্বারা পূর্ণ আনুগত্য করাকেই বুঝিয়েছেন কারণ এটা (অর্থাৎ আল্লাহ ও তার রাসূলের পূর্ণ আনুগত্যই) একমাত্র মাধ্যম যা তাঁর নৈকট্য দিতে পারে এবং তার রহমতের দরজা খুলতে ও জান্নাতে প্রবেশ করাতে সক্ষম। তাই বলছেনঃ
(হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তার কাছে অসীলা (পূর্ণ আনুগত্যের মাধ্যমে নৈকট্য) অন্বেষণ কর আর তার রাস্তায় জিহাদ কর যাতে করে তোমরা সফলকাম হতে পার।) {সূরা আল-মায়িদাহ্: ৩৫}
নেককার বান্দাদেরকে যারা অসীলা হিসাবে গ্রহণ করে এমন মুর্খ, চেতনাহীন লোকদেরকে আল্লাহ তা'আলা পরিহাস করেছেন কারণ তারা নেককার বান্দাদেরকে অসীলা বানাচ্ছে, অথচ নেককার বান্দারা নিজেরাই এই অসীলা তথা আল্লাহর আনুগত্য দ্বারা নৈকট্য হাসিলের অধিক মুখাপেক্ষী।
আর এ ছাড়া আল্লাহর নৈকট্য লাভের দ্বিতীয় কোন পথ নেই, যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:
(তারা যাদের আহবান করছে তারা নিজেরাই তাদের প্রভূর নৈকট্য লাভের জন্য অসীলা খুঁজছে। তারা তার রহমতের আশা করছে, তার শাস্তির ভয় করছে, নিশ্চয়ই আপনার প্রভুর শাস্তি ভীতিপ্রদ)। {সূরা আল-ইসরা: ৫৭}
বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, এ সমস্ত অমনযোগী লোকেরা যাদেরকে মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করেছে তাদের সত্তার উপর ভরসা করে থাকার ফলে নেক আমল করা থেকে বিরত থাকছে, খারাপ কাজে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। যা মুসলমানদের অধঃপতনের কারণ হয়েছে। তারা ভুলে গেছে বা ভুলে থাকার ভান করছে যে, আল্লাহ তা'আলা তাঁর রাসূলকে - যিনি সমস্ত মানব সন্তানের নেতা - তাঁকে সম্বোধন করে বলেছেনঃ
(বলুনঃ আমি আমার নিজের কোন উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখিনা)। {সূরা আল-আ’রাফ: ১৮৮}
অনুরুপভাবে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কলিজার টুকরা কন্যাকে সম্বোধন করে বলেছেনঃ
(হে ফাতিমা ! আমার কাছে যত সম্পদ আছে তার থেকে যা ইচ্ছা হয় চেয়ে নাও, আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোন কাজে আসবনা )। {বুখারী ও মুসলিম}
তিনি আরো বলেন :  (যখন কোন মানুষ মারা যায় তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়, কেবলমাত্র তিনটি আমল ব্যতীত...)। {মুসলিম}
যদি নবীগণ ও নেক্কার লোকদের ব্যক্তিসত্তার অসীলা গ্রহণ জায়েয না হওয়ার ব্যাপারে কোন দলীল না থাকত, বরং আমাদের সামনে উমর (রাদিয়াল্লাহু আন্হু) এর সেই ঘটনাটিই শুধু থাকত, যাতে তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মৃতু্যর পর তাঁর অসীলা বাদ দিয়ে তার চাচা আব্বাসের দুআ'র শরণাপন্ন হয়েছিলেন, তবে অসীলাবাদী এ দলের মুলোৎপাটনে তাই যথেষ্ট হত।
ইমাম আবু হানীফা (রাহমাতুল্লাহ আলাইহি) কতই না সুন্দর বলেছেন: "আমি আল্লাহর কাছে আল্লাহ ব্যতীত অপর কিছুর মাধ্যমে কিছু চাওয়াকে হারাম মনে করি" দুররে মুখতার ও হানাফীদের অন্যান্য কিতাবে তা ইমাম সাহেব থেকে বর্ণিত আছে। যদি ব্যক্তি স্বত্বা দ্বারা অসীলা দেয়া জায়েজ হতো, তবে কুরআন ও হাদীসের যাবতীয় দুআ' যার সংখ্যা অগণিত তা ব্যক্তি সত্তার অসীলা দিয়েই আসত। (কিন্তু তার একটিও সেভাবে আসেনি)।
তিনঃ যারা স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে মাধ্যম বলতে বুঝেছেন সেই রিসালাতকে যার মানে হলো দ্বীন প্রচার, শিক্ষাদান ও দ্বীনের প্রশিক্ষণ। তারা এই রিসালাতের উচ্চ মর্যাদা এবং এর প্রতি মানব জাতির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছেন। ফলে তারা শরয়ী বিধান লাভের উদ্দেশ্যে এবং ঐশী বাণী বা ওহীর আলোকে আলোকিত হওয়ার জন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বড় মাধ্যম এবং বৃহৎ অসীলা হিসাবে গ্রহণ করেছেন। যেমনিভাবে তারা কুরআন অধ্যয়ন করছেন তেমনিভাবে তারা রাসূলের পবিত্র জিবনী ও তার সুন্নাত অধ্যয়ন করছেন। এতে তাদের শ্লোগান হচ্ছে আল্লাহর বাণীঃ
(নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে আল্লাহর কাছ থেকে নূর এবং সুস্পষট গ্রন্থ এসেছে, এর দ্বারা যারা আল্লাহর সন্তুষটির পিছনে ধাবিত হয় আল্লাহ তাদেরকে হিদায়াত প্রদান করেন, আর তাদেরকে তাঁর ইচ্ছা মোতাবেক অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে যান, এবং সরল সোজা পথে পরিচালিত করেন )। {সূরা আল-মায়িদাহ্: ১৫, ১৬}
এরাই হলো মুক্তি প্রাপ্ত দল যাদের কথা পূর্বোক্ত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, এবং তাদেরকেই জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে।
কিন্তু দুঃখের বিষয়: এ গ্রুপের পথ বিপদসংকুল, কন্টকাকীর্ণ। কেননা সত্যিকার ইসলাম আজ অপরিচিত হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ মুসলমান এর থেকে অনেক দুরে সরে গেছে। তারা এ দ্বীনকে বিদআ'ত ও মনগড়া রসম রেওয়াজে পরিবর্তন করেছে।
এই রোগ অতি পুরাতন, এ ব্যাপারে সংস্কারকদের ভুমিকা খুব ভয়াবহ ও কষ্টসাধ্য।
উমর বিন আব্দুল আজীজ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন (আমরা এমন কাজ সংসকার করতে চেষ্টা করছি যাতে আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর কোন সাহায্যকারী নেই, যে কাজ করতে গিয়ে বৃদ্ধরা তাদের জীবন শেষ করেছে, আর ছোট ছোট ছেলেরা যুবক হতে চলেছে, বেদুঈনগণ তাদের বাস্তু ত্যাগ করে চলে গেছে। তারা এটাকে দ্বীন (ধর্ম) মনে করেছে অথচ এটা আল্লাহর কাছে দ্বীন বলে সাব্যস্ত নয়।)
অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়, কারণ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্বীনের এ করুণ দৃশ্যের কথা বর্ণনা করতে যেয়ে বলেছেন,
(ইসলাম অপরিচিত হিসাবে শুরু হয়েছে। যেভাবে তা শুরু হয়েছিল সেভাবে আবার (অপরিচিত) অবস্থায় ফিরে আসবে। সুতরাং গরীব (এই অপরিচিত) দের জন্যই সুসংবাদ) হাদীসটি মুসলিম শরীফে আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আন্হু)থেকে বর্ণিত।
অপর বর্ণনায় এসেছে,  (বলা হলঃ হে আল্লাহর রাসূল এই গরীব (অপরিচিত) রা কারা? বললেনঃ বিভিন্ন গোত্র থেকে উত্থিত বিক্ষিপ্ত কতক ব্যক্তিবর্গ) আহমাদ, ইবনে মাজা।
তিরমিযির এক (হাছান) বর্ণনায় এসেছে,
(এই গরীবদের জন্য সুখবর যারা আমার সুন্নাতের যে অংশ মানুষ নষ্ট করেছে তা পূণঃ সংস্কার করে চালু করেছে)।
মুসনাদে আহমাদে অপর এক সহীহ বর্ণনায় এসেছে,
(এই গরীব (অপরিচিত) গণ হলোঃ অনেক খারাপ লোকের মাঝখানে এমন কিছু ভাল লোক, যাদের অনুসারীর চেয়ে বিরোধীরাই হবে বেশী)।
সুতরাং এ গ্রুপকেই সংসকার কাজে এগিয়ে যেতে হবে, সংস্কারের আলোতে মুসলমানদের জাগিয়ে পুনরায় সঠিক ইসলামের দিকে ফিরিয়ে নিতে হবে। আর বিরোধীতা ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের আমরা তাই বলব যা আল্লাহ তা'আলা তাদের পূর্বসুরীদেরকে বলেছেনঃ
(আমাদের কি হলো যে, আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করবনা অথচ তিনি আমাদেরকে যাবতীয় পথের দিশা দিয়েছেন? আর আমরা তোমাদের শত আঘাতের বিপরীতে ধৈর্য্য ধারণ করবো, ভরসাকারীগণ যেন শুধু আল্লাহর উপরই ভরসা করেন)। {সূরা ইব্রাহীম: ১২}








কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন