রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

যে সব কাজ জান্নাতের পথে বাধা সৃষ্টি করে

 মুহাম্মদ হামিদুল ইসলাম আজাদ

 

১. ঈমান না আনা : রসুল স্বল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ إِلا مُؤْمِنٌ
ঈমানদার ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না” (বুখারী ও মুসলিম)
তিনি আরও বলেন,
 لا تَدْخُلُوا نَ الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا
তোমরা ঈমান না আনা পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন না” (সহীহ্‌ মুসলিম, হা/৫৪)
২. প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া :  রসুল স্বল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,


 لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لا يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ
যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না” (সহীহ মুসলিম/৪৬)
৩. অহংকার করা : রসুল স্বল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
 لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ
যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার রয়েছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না ” (মুসলিম, হা/৯১)
৪. চোগলখোরি ও পরনিন্দা করা :  রসুল স্বল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
 لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ نَمَّامٌ
চুগলখোর বা পর নিন্দাকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না ” (সহীহ মুসলিম, হা/১০৫)
তিনি আরও বলেছেন,
 تَجِدُ مِنْ شَرِّ النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عِنْدَ اللَّهِ ذَا الْوَجْهَيْنِ الَّذِي يَأْتِي هَؤُلَاءِ بِوَجْهٍ وَهَؤُلَاءِ بِوَجْهٍ
কিয়ামতের দিন সবচেয়ে খারাপ লোকদের দলভুক্ত হিসেবে ঐ ব্যক্তিকে দেখতে পাবে যে, যে ছিল দুমুখো- যে এক জনের কাছে এক কথা আরেক জনের কাছে আরেক কথা নিয়ে হাজির হত” (সহীহ মুসলিম, হা/২৫২৬)
৫. আত্মহত্যা করা : রসুল স্বল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
 مَنْ تَرَدَّى مِنْ جَبَلٍ فَقَتَلَ نَفْسَهُ ، فَهْوَ فِى نَارِ جَهَنَّمَ ، يَتَرَدَّى فِيهِ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا ، وَمَنْ تَحَسَّى سَمًّا فَقَتَلَ نَفْسَهُ ، فَسَمُّهُ فِى يَدِهِ ، يَتَحَسَّاهُ فِى نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا ، وَمَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِحَدِيدَةٍ ، فَحَدِيدَتُهُ فِى يَدِهِ ، يَجَأُ بِهَا فِى بَطْنِهِ فِى نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا
যে ব্যক্তি নিজেকে পাহাড়ের ওপর থেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে যাবেসেখানে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে অনন্তকাল ধরেযে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, সে তার বিষ তার হাতে থাকবেজাহান্নামে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে বিষ খাইয়ে মারতে থাকবে অনন্তকাল ধরেযে কোনো ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করেছে তার কাছে জাহান্নামে সে ধারালো অস্ত্র থাকবে যার দ্বারা সে সর্বদা নিজের পেটকে ফুঁড়তে থাকবে[সহীহ বুখারী : ৫৪৪২; মুসলিম : ১০৯]
৬. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা : রসুল স্বল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
 لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعُ رَحِمٍ
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না” (সহীহ মুসলিম, হা/২৫৫৬)
৭. হারাম খাওয়া : রসুল স্বল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

  لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ لَحْمٌ نَبَتَ مِنْ سُحْتٍ
হারাম অর্থের মাধ্যমে (যে শরীরে) মাংস বৃদ্ধি পেয়েছে তা জান্নাতে প্রবেশ করবে নাঅর্থা যে ব্যক্তি হারাম অর্থ ও অবৈধ উপার্জন দ্বারা দেহ গঠন করেছে জাহান্নামের আগুনই তার প্রাপ্য” (তাখরীজ মিশকাতুল মাসাবীহ,সহীহ, আলবানী, হাদীস নং ২৭০৩)
৮. উপকার করে খোটা দেয়া : রসুল স্বল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
  لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنَّانٌ
সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না যে উপকার করে খোটা দেয়সুনান নাসাঈ, হা/ ৫৬৮৮, সহীহ, আলবানী)
৯. তক্দীর (ভাগ্যের লিখন) অস্বীকার করা : রসুল স্বল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
 لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ عَاقٌّ ، وَلا مُدْمِنُ خَمْرٍ ، وَلا مُكَذِّبٌ بِقَدَرٍ
পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, মদ্যপায়ী এবং তকদীর অস্বীকার কারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না” (সিলসিলা সহীহা, হাসান, ৬৭৫)
১০. যাদুর বৈধতায় বিশ্বাস করা :
১১. মদ, গাঁজা ও নেশা দ্রব্য গ্রহণ করা :
১২. গণক : রসুল স্বল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ خَمْسٌ ، مُدْمِنُ خَمْرٍ ، وَلا مُؤْمِنٌ بِسِحْرٍ ، وَلا قَاطِعُ رَحِمٍ ، وَلا مَنَّانٌ ، وَلا كَاهِنٌ
পাঁচ শ্রেণির মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (তারা হল,) মদ্যপায়ী, যাদুর বৈধতায় বিশ্বাসী, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, চোগলখোর এবং গণক” (মুসনাদে আহমদ, হাসান, আলবানী)
১৩. ঋণ পরিশোধ না করা : রসুল স্বল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট কোন ঋণগ্রস্ত মৃতের লাশ (জানাযার জন্য) নিয়ে আসা হলে জিজ্ঞেস করতেন, “সে ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করেছে কি না?” যদি বলা হত করেছে, তবে জানাযা পড়তেনঅন্যথায় (সাহাবীদেরকে) বলতেন, صَلُّوا عَلَى صَاحِبِكُمْ
তোমরা তোমাদের সাথীর জানাযা পড়ে নাও (কিন্তু তিনি নিজে তাতে অংশ গ্রহণ করতেন না)। (সহীহ মুসলিম, হা/১৬১৯) অন্য হাদীসে রয়েছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
 يُغْفَرُ لِلشَّهِيدِ كُلُّ ذَنْبٍ إِلَّا الدَّيْنَ
শহীদের ঋণ ছাড়া সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে” (সহীহ মুসলিম, হা/১৮৮৬)
১৪. পুরুষ বেশধারী নারী :
১৫. দাইয়ুস : আল্লাহর রসুল স্বল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:
 ثَلاثٌ لا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ : الْعَاقُّ لِوَالِدَيْهِ ، وَالدَّيُّوثُ ، وَرَجُلَةُ النِّسَاءِ
তিন শ্রেণির লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে নাতারা হল, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, দাইয়ূস এবং পুরুষ বেশধারী নারী” (সহীহুল জামে, আলবানী, হা/৩৬৩) দাইয়ুস: রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
 الدَّيُّوثُ الَّذِي يُقِرُّ فِي أَهْلِهِ الْخَبَثَ
ঐ ব্যক্তিকে দাইয়ুস বলা হয় যে তার পরিবারের অশ্লীলতা ও কুকর্মকে মেনে নেয়” (মুসনাদ আহমদ, নাসাঈ)
১৬. বৃদ্ধ ব্যভিচারী :
১৭. মিথ্যাবাদী শাসক :
১৮. অহংকারী দরিদ্র : রসুল স্বল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
 ثَلاثَةٌ لا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ : شَيْخٌ زَانٍ ، وَمَلِكٌ كَذَّابٌ ، وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ
কিয়ামতের আল্লাহ দিন তিন শ্রেণীর লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে পীড়া দায়ক শাস্তিতারা হল বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী শাসক, অহংকারী দরিদ্র। (মুসলিম, হা/১০৭)
১৯. কঠোর প্রকৃতি ও কটুভাষী লোক এবং যে ব্যক্তি মানুষের কাছে এমন বিষয় নিয়ে গর্ব-অহংকার প্রকাশ করে বেড়ায় প্রকৃতপক্ষে যা তার নিকট নেই : রসুল স্বল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ الْجَوَّاظُ ، وَلَا الْجَعْظَرِيُّ
কঠোর প্রকৃতি ও কটুভাষী লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং ঐ লোকও নয় যে এমন সব বিষয়ে মানুষের নিকট গর্ব-অহংকার প্রকাশ করে বেড়ায় প্রকৃতপক্ষে যা তার কাছে নাই” (আবু দাঊদ, হা/৪৮০১, সহীহ, আলবানী)
২০. মুসলিম সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ ভাবে বসবাসকারী অমুসলিমকে হত্যা করা : রসুল স্বল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
 مَنْ قَتَلَ مُعَاهَدًا لَمْ يَرِحْ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ ، وَإِنَّ رِيحَهَا تُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ أَرْبَعِينَ عَامًا
যে ব্যক্তি কোন মুয়াহিদ তথা মুসলিম সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ ভাবে বসবাসকারী কোন অমুসলিমকে হত্যা করবে সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে নাঅথচ চল্লিশ বছরের পথের দূরত্ব থেকে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়” (সহীহ বুখারী হা/৩১৬৬)
২১. বিশ্বাসঘাতক শাসক : রসুল স্বল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
 مَا مِنْ عَبْدٍ يَسْتَرْعِيهِ اللَّهُ رَعِيَّةً ، يَمُوتُ يَوْمَ يَمُوتُ وَهُوَ غَاشٌّ لِرَعِيَّتِهِ إِلا حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ
যাকে আল্লাহ তায়ালা জনসাধারণের শাসনকর্তা হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, কিন্তু সে জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং বিশ্বাসঘাতক অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে তাহলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন” (সহীহ মুসলিম, হা/১৪২)
২২. মানুষকে প্রহার করা :
২৩. মহিলাদের পর্দা হীনতা : রসুল স্বল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
 صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ ، لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ ، وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلَاتٌ مَائِلَاتٌ ، رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ ، لَا يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يَجِدْنَ رِيحَهَا ، وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا
দু শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামে যাবে- যাদের আমি এখনো দেখি নি। (অর্থা রসুল স্বল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে তাদের আত্মপ্রকাশ হয় নি) ক) এমন কিছু লোক যাদের হাতে থাকবে গরুর লেজের মত লাঠিএরা তা দিয়ে জনগণকে (অন্যায়ভাবে) প্রহার করবে খ) এবং ঐ সকল উলঙ্গ-অর্ধ উলঙ্গ নারী যারা (নিজেদের চলাফেরা ও বেশ-ভূষায়) মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করবে এবং নিজেরাও অন্য মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হবেতাদের মাথায় উটের মত উঁচু এবং একপাশে ঝুঁকে থাকা চূড়ার মতো কেশ রাশি শোভা পাবেএসমস্ত নারী জান্নাতে তো যাবেই না বরং জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না অথচ এত এত দূর থেকে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়” (সহীহ মুসলিম, হা/২১২৮)


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন