শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৭

প্রশ্ন: জুমার খুতবা বাংলায় দেওয়া যাবে কি?

প্রশ্ন: জুমার খুতবা বাংলায় দেওয়া যাবে কি?

উত্তর: খুতবা সম্পর্কিত ইসলামিক কিছু বিধান: এর জন্য সংগৃহীত কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমার খুতবায় আল্লাহর তারীফ করতেন, দরুদ পড়তেন, কুরআন থেকে তেলাওয়াত করতেন এবং কিছু ওয়াজ-নছীহত ও করতেন। নবীদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:

وَم ا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ
“আমি সব নবীকেই তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছি, যাতে তাদেরকে পরিষ্কার বোঝাতে পারে।” (সূরা ইবরাহীম: ৪)
রসুলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাতৃভাষা যেহেতু আরবী ছিল এবং ছাহাবীদেরও ভাষা আরবী ছিল, তাই তিনি আরবীতেই তাদেরকে নছীহত করতেন। এখন যারা নবীজির নায়েব হয়ে জুমার খুতবা দিবেন তাদেরকেও উল্লেখিত আয়াত ও হাদীছ অনুসারে তাদের শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে মাতৃভাষায় খুতবা দেয়াটা শরীয়ত সম্মত এবং যুক্তি সংগত।
এই কারণেই ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন: প্রত্যেক খতীবকে জুমার সময় তাঁর মাতৃভাষায় ওয়াজ করা ওয়াজিব বা অবশ্য কর্তব্য। (তানক্বীহুর রুওয়াত ১/২৬৪)
আল্লামা তাহাভী হানাফী বলেন: জুমার খুতবা আরবী জানলেও ফারসী (মাতৃভাষায়) ও চলবে। (হাশিয়া তাহতাবী আলা মারাক্বিল ফালাহ ২৭)
<> আল্লামা আব্দুল হাই লাখনভী হানাফী (রহ) বলেন: শ্রোতাদেরকে তাদের মাতৃভাষায় খুতবা বুঝিয়ে দেয়া জায়েজ। (মাজমূআহ ফাতাওয়া ১/২৪৫)
<> হানাফী ফিক্বহ গ্রন্থ নিহায়া, মুজতাবা, ফাতাওয়া সিরাজিয়্যাহ, মুহীত প্রভৃতি গ্রন্থে আছে যে, ইমাম আবূ হানীফার মতে ফারসী (মাতৃভাষায়) ভাষাতে জুমার খুতবা দেয়া জায়েজ। হানাফী ফতোয়ার কিতাব শামীতে আছে, আরবী ভাষায় খুতবা দেয়া শর্ত নয়। হানাফী ফিকহ গ্রন্থ হিদায়ায় আছে, প্রত্যেক ভাষায় খুতবার নছীহত চলতে পারে। (কিতাবুল জুমআহ ৫৫-৫৬) (আলোচনা দ্র: আইনী তোহফা সলাতে মুস্তফা১/৯৮-৯৯)
ইসলামকে বিশ্বব্যাপী সকল ভাষা সকল মানুষের নিকটে তাদের স্ব স্ব (মাতৃভাষায়) ভাষায় বোঝানো ও ব্যাখ্যা করার নির্দেশ স্বয়ং মহান রাব্বুল আলামীনের। (সূরা নাহল ৪৪ ও ৬৪)।
উপদেশ গ্রহন করতে পারে। (সূরা দুখান ৫৮)। ইমাম চতুষ্ঠয়ের মধ্যে একমাত্র ইমাম মালিক (রহঃ) বলেছেন খুৎবা আরবীতে পড়া জরুরী। এছাড়া ইমাম আবু হানিফা,শাফেই,আহমাদ (রহঃ) সহ বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞই বলেছেন অন্য যেকোন ভাষায় খুৎবা দেওয়া যাবে। {(তবে যে আরবী আয়াতগুলো পড়া হয় তা আরবীতে পড়তে হবে- (বুখারী, মিশকাত হা/-২১০৯)।}
ইমাম আবূ হানীফার মতে ফারসীতে খুৎবা বা (মাতৃভাষা) দেওয়া যায়েজ। (নেহায়া মুস্তাবা)। (উল্লেখ্যে ইমাম আবু হানীফার মাতৃ ভাষা ফার্সি ছিল) ইমাম শাফেঈ বলেনঃ প্রত্যেক খতিবকে জুম’আর সময় তার মাতৃ ভাষায় ওয়াজ করা ওয়াজিব তথা অবশ্যই কর্তব্য। (তানকীহুর রুওয়াত ১/১৬৪ পৃষ্ঠা) ।
আল্লামা ত্বাহাতাভী হানাফী বলেনঃ জুম’আর খুৎবা আরবী ভাষায় জানলেও ফারসী বা (মাতৃভাষায়) ভাষায় চলবে। (হাশিয়াহ ত্বাহাতাভী আল মারআ কি লফালাহ ২৭৭ পৃষ্ঠা)।
আল্লামা আবদুল হাই লাখনৌভী হানাফী বলেনঃ শ্রোতাদের তাদের ভাষায় খুৎবা বুঝিয়ে দেওয়া যায়েজ। (মাজমুয়া ফাতওয়া ১/২৪৫ পৃষ্ঠা)। প্রত্যেক ভাষায় খুৎবা নছিয়ত চলতে পারে। (হিদায়া কিতাবুল জুম’আ ৫৫-৫৬ পৃষ্ঠা)। নওয়াব সিদ্দিক খান ভূপালী (রহঃ) বলেন, শ্রোতা মন্ডলীকে জান্নাতের প্রতি উৎসাহ দান ও জাহান্নামের ভয় প্রদর্শন করাই ছিল রাসূল (ছাঃ) -এর খুৎবার নিয়মিত উদ্দেশ্য। এটাই হল খুৎবার প্রকৃত রুহ এবং এজন্য খুৎবার প্রচলন হয়েছে। (আর রওযাতুন নাদিয়্যাহ ১/৩৪৫)।
[গবেষণা ও প্রচারেঃ] বাংলাদেশ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ও বাংলাদেশ ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার,
যোগাযোগঃ ০১৭৪২৩৪৪১০৭

1 টি মন্তব্য: