শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৭

জামায়াতে সালাতের কতিপয় অবহেলিত সুন্নাত !

জামায়াতে সালাতের কতিপয় অবহেলিত সুন্নাত !
মসজিদে প্রবেশের পরে সেখানে পালনীয় অনেক সুন্নাত অজ্ঞানতা বা অবহেলার কারণে আমরা পরিত্যাগ করে থাকি। এ ধরনের মৃত ও পরিত্যক্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত এখানে সংক্ষেপে উলেখ করছি। আশা করছি অন্তত কিছু পাঠক এ সুন্নাতগুলো পালন করে মৃত সুন্নাত জীবিত করার অতুলনীয় সাওয়াব অর্জন করবেন এবং লেখকও তাঁদের সাথে সাওয়াবের অংশী হবেন।
(১). জামায়াতে গমনের সময় তাড়াহুড়ো করা হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, সালাতের ইকামত হওয়ার পরেও যদি তোমরা মসজিদে যাও তাহলে মানসিক অস্থিরতা বা দৌড়াদৌড়ি করে মসজিদে যাবে না। শান্তভাবে ও ধীরে ধীরে যাবে। যতটুকু সালাত ইমামের সাথে পাবে তা আদায় করবে, বাকিটা পরে নিজে আদায় করবে। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, ঘর থেকে সালাতের জন্য বের হওয়ার সময় থেকেই মুসলী সালাতের মধ্যেই থাকেন এবং আল্লাহর কাছে তিনি সালাতরত বলে গণ্য হন। যদি কেউ মসজিদে গিয়ে দেখেন যে পুরো জামায়াত শেষ হয়ে গিয়েছে তাহলেও তিনি জামায়াতের সাওয়াব পাবেন।
(২). মসজিদে প্রবেশ করার পর আগের কাতারে জায়গা থাকা সত্ত্বেও পিছনের কাতারে দাঁড়নো কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ও গোনাহের কাজ। যথাসম্ভব ধীর স্থিরভাবে আগের কাতারে দাঁড়াতে হবে। এতে ইমাম এক রাক’আত শেষ করে ফেললে কোনো ক্ষতি নেই। আমরা মসজিদে রাক’আত গণনা করতে যাই না, সাওয়াব অর্জন করতে যাই। তাড়াহুড়ো করলে, পিছনের কাতারে দাঁড়ালে গোনাহ হবে। আর শান্তভাবে আগের কাতারে দাঁড়ালে সাওয়াব বেশি হবে।
(৩). সালাতের কাতারে যথাসম্ভব গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়াতে, মাঝের ফাঁক বন্ধ করতে ও কাতার সোজা করতে নির্দেশ দিয়েছেন রাসূলুলাহ সাঃ,
(৪). মসজিদে প্রবেশ করে বসার আগে ‘দুখুলুল মসজিদ’ বা ‘তাহিয়্যাতুল মসজিদ’ সালাত আদায় করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত । রাসূলুলাহ সাঃ মসজিদে প্রবেশ করে বসার আগে অন্তত দু রাক’আত সালাত আদায় করতে বারবার উৎসাহ দিয়েছেন। মসজিদে প্রবেশ করে মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে দু রাকআত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ আদায় করতে হবে। সুন্নাতে মুআক্কাদা বা জামাতে দাঁড়িয়ে গেলেও তাহিয়্যাতুল মসজিদের সুন্নাত আদায় হবে। কোনো সালাত না পড়ে বসলে এ সুন্নাত পালনের সাওয়াব থেকে আমরা বঞ্চিত হব।
(৫). সালাতে দাঁড়ানোর সময় সামনে, তিন হাতের মধ্যে সুতরা বা আড়াল রাখা রাসূলুলাহ সাঃ -এর নির্দেশিত ও আচরিত সুন্নাত ।
(৭). অনেক মুসলী সালাতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দাড়ানো, বসা, হাত উঠানো, হাত রাখা ইত্যাদির খুঁটিনাটি সুনড়বাত না জানার ফলে অগণিত সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হন। এগুলো অভিজ্ঞ আলিমগণের নিকট থেকে ব্যবহারিকভাবে শিক্ষা করা অতি প্রয়োজন।
(৮). জামায়াত শেষে সুন্নাত সালাত মসজিদে আদায় করলে ফরযের স্থান থেকে সরে যাওয়া সুনড়বাত। ইমাম আবু হানীফার মতে ইমামের জন্য যে স্থানে ফরয পড়েছেন সে স্থানে অবস্থান বা সুনড়বাত আদায় মাকরুহ। তিনি বলেন: .... যোহর, মাগরিব ও ইশার সালতে ইমামের জন্য সালামের পর স্বস্থানে বসে থাকা মাকরূহ। তার উঠে যাওয়া আমার পছন্দ। ফজর ও আসরে ইচ্ছানুসারে উঠে যাবে অথবা ... ঘুরে বা মুসলীদের দিকে মুখ করে .... বসে থাকবে। যোহর, মাগরিব ও ইশার পরে ‘তাতাওউ’ (ঐচ্ছিক বা সুন্নাত) আদায় করতে চাইলে সে মুসলীদের পিছনে বা যেখানে ফরয পড়েছে সেখানে ছাড়া মসজিদের অন্য কোথাও তা পড়বে। মুক্তাদীগণ যদি স্বস্থানে সুন্নাত আদায় করে তবে অসুবিধা নেই। তবে দু-এক পা সরে যাওয়া তাদের জন্য উত্তম। (মুহাম্মদ ইবনুল হাসান, আল-মাবসূত ১/১৭-১৮)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন