শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৭

সকল ফরযের বড় ফরয কোনটি ?

সকল ফরযের বড় ফরয কোনটি ?

রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার উপকারিতার দিক লক্ষ্য করে হয়তো আমাদের অন্তরে একথা আসতে পারে যে, প্রথমে ব্যক্তির মধ্যে দীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য চেষ্টা করার চেয়ে বোধ হয় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য চেষ্টা করাই সকল ফরযের বড় ফরয। তবে আমরা যদি নিচের বিষয়গুলি নিয়ে একটু গভীরভাবে চিন্তা করি, তাহলে দেখতে পাব যে, আসলে আমাদের উক্ত ধারনা ঠিক নয়। বিষয়গুলি নিম্নরূপঃ
১. দীনের অধিকাংশ বিধি-বিধানই ব্যক্তির সাথে সম্পর্কিত, রাষ্ট্রীয় ভাবে দীন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালানোও ব্যক্তির মধ্যে প্রতিষ্ঠারই একটি অংশ। তবে ধারাবাহিকতার দিক থেকে এ কাজের অবস্থান ব্যক্তির মধ্যে দীন প্রতিষ্ঠার জন্যে চেষ্টা করার কাজের পরে রয়েছে। অন্যান্য লোকদের কে আগুন থেকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করার পূর্বে আগে নিজেকে ও নিজের পরিজনকে আগুন থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে হবে।
২. ব্যক্তি পর্যায়ে দীন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার, ব্যক্তি ইচ্ছা করলেই তা করার জন্য সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দীন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি একটি সামষ্টিগত ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। অধিকাংশ মানুষ তা না চাইলে হবে না। আবার অনেক সময় চাইলেও হতে অনেক সময়ের প্রোয়জন হয়। এখন ব্যক্তি যদি নিজের মধ্যে পরিপূর্ণ ভাবে দীন প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা না করে সে পর্যন্ত অপেক্ষা করে, তা হলে আংশিক দীন নিয়েই তাকে দুনিয়া থেকে বিধায় নিতে হতে পারে, যা কারোই কাম্য হতে পারে না।
৩. রাষ্ট্রীয় পর্যয়ে দীন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি ব্যক্তির মধ্যে দীন প্রতিষ্ঠার ওপর নির্ভরশীল। যারাই ঈমান ও আমল এর গুনে গুণান্বিত হয়ে নিজেদের মধ্যে দীন প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবেন, তাদের কেই রাষ্ট্র পরিচালনার দ্বায়িক্ত প্রদানের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা সূরা নূরের ৫৫ নং আয়াতে প্রতিশ্রতি দিয়েছেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, ব্যক্তি পর্যায়ে দীন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দীন প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করাই হচ্ছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দীন প্রতিষ্ঠায় আল্লাহর অনুসৃত পন্থা ও পদ্ধতি।
৪. ব্যক্তির মধ্যে দীন প্রতিষ্ঠার মধ্যে কিছুটা ঝুকি থাকলেও তুলনামূলকভাবে তা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দীন প্রতিষ্ঠার চেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ কেননা, তা করতে যেয়ে যে কোন সময় ব্যক্তির আর্থিক ও দৈহিক ক্ষতি সাধিত হতে পারে, এমন কি তার জীবনও চলে যেতে পারে। তাই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দীন প্রতিষ্ঠার জন্য ঝুকি নেওয়ার পূর্বে ব্যক্তি নিজের মধ্যে দীন প্রতিষ্ঠা করে নিজেকে যথাসম্ভব ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। এর পাশাপাশি সময় সুযোগ বুঝে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দীন প্রতিষ্ঠার মত ঝুঁকিপূর্ণ কাজে অাত্ননিয়োগ করতে হবে।
৫. ব্যক্তির মধ্যে দীন প্রতিষ্ঠা হচ্ছে ফরজে আইন পক্ষান্তরে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দীন প্রতিষ্ঠার জন্য দাওয়াত প্রদান করা এবং প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তা রক্ষার জন্য প্রোয়জনে সশস্ত্র জিহাদ করা ফরযে কিফায়া বা সামষ্টিক দ্বায়িক্ত হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। সুযোগ ও সাধ্যের আলোকে তা পালনীয় বিষয়। কেউ বা সকলে দাওয়াত প্রত্যাখান করলে তাতে মুমিনের কোন দায়বদ্ধতা থাকে না।
এসব বিষয়াদি বিবেচনা করলে সহজেই প্রতিয়মান হয় যে, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দীন প্রতিষ্ঠার জন্য দাওয়াতী কাজ করার পূর্বে ব্যক্তি পর্যায়ে পরিপূর্ণ ভাবে দীন প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করা সকল ফরজের বড় ফরয।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন