শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৭

প্রশ্ন: ইসলামী রাষ্ট্রের পরিচয় ?

প্রশ্ন: ইসলামী রাষ্ট্রের পরিচয় ?

উত্তর: ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করা এবং এ লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালানো নিছক একটি রাজনৈতিক বিষয় নয় বরং এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দীনি প্রয়োজন ও দায়িত্ব। এ দীনি দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া বা একে খাটো করে দেখার কোন অবকাশ নেই। অথবা রাজনীতি বলে এ থেকে নিস্পৃহ থাকারও অবকাশ নেই ইসলামী শরীয়তে।
আমরা ইসলামী রাষ্ট্র চাই। কিন্তু কেন চাই। এর পেছনে কি যুক্তি আছে। ইসলাম আল্লাহ প্রদত্ত একমাত্র জীবনব্যবস্থা। জীবন, জগৎ ও মানুষ সম্পর্কে ইসলামের বক্তব্য সুনির্দিষ্ট। রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও এ স্বাতন্ত্র্য পরিব্যাপ্ত। একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা বিধায় রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা ইসলামের অপরিহার্য অংশ। ইসলামের দৃষ্টিতে বর্তমানকালে রাষ্ট্র এমন একটি শক্তিশালী ব্যবস্থা যা মানবজীবনের বিভিন্ন দিককে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। তাই পরিপূর্ণভাবে দীনের পথে চলতে হলে ইসলামী রাষ্ট্রের কোন বিকল্প নেই।

ইসলামী রাষ্ট্র বলতে এমন রাষ্ট্রকে বুঝায় যা ইসলামী বিধিবিধান তথা কুরআন, সুন্নাহ ও ইসলামী শরীয়াতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয়। বিভিন্ন মনীষীগণ বিভিন্নভাবে ইসলামী রাষ্ট্রের সংজ্ঞা দিয়েছেন।
আল মাওয়ার্দী বলেন, দুনিয়ার কর্তৃত এবং দ্বীনের সংরক্ষণে নবুয়তের প্রতিনিথিত্বেও লক্ষ্যে যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, তাকে ইসলামী রাষ্ট্র বলে। (আহকামুস সুলতানিয়াহ)
ইসলামী রাষ্ট্রের সংজ্ঞা প্রদান করতে গিয়ে প্রফেসর ডঃ খুরশীদ আহমদ বলেন, ‘যে রাষ্ট্রের যাবতীয় কর্মকান্ড ইসলামী আইন-কানুন দ্বারা পরিচালিত, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সার্বভৌমত্ব ও প্রাধান্য মেনে নিয়ে যে মোতাবেক লক্ষ্যে পৌঁছার সর্বাত্মক প্রয়াস যে রাষ্ট্রে চালানো হয় তাই ইসলামী রাষ্ট্র।”
আল্লামা ইবনে খালদুনের মতে, ‘ইসলামী শরীয়াতের দাবি অনুযায়ী নাগরিকদের বৈষয়িক, ইহ জাগতিক ও পরকালীন কল্যাণ সাধনের সার্বাধিক দায়িত্ব গ্রহণকারী রাজনৈতিক সংগঠনই ইসলামী রাষ্ট্র।
আল্লামা সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদী রহঃ বলেন, যে রাষ্ট্রের আইন, শাসন, বিচার বিভাগ তথা যাবতীয় ব্যবস্থাপনা ইসলামী আদর্শ ও কুরআন-সূন্নাহ প্রদর্শিত নীতিমালার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়, তাকে ইসলামী রাষ্ট্র বলা হয়।
হানাফি মাযহাবের প্রখ্যাত ফকীহ ইমাম আল কাসানি (রহ) লিখেছিলেন: “আমাদের ইমাম (আবু হানীফা) বলেছেন যে ৩টি ক্ষেত্রে দারুল ইসলাম দারুল কুফরে পরিণত হয় – ইসলামের পরিবর্তে কুফরি আইন যখন প্রভাবশালী হয় অথবা কাফের রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি ছাড়াই যখন দারুল ইসলামের সীমানা থাকে অথবা মুসলিম এবং যিম্মিদের কোন নিরাপত্তা মুসলিমদের হাতে থাকে না” [বাদা’উস সানা’ই, খণ্ড ৭]
পরিপূর্ণভাবে ইসলামের পথে চলতে হলে ইসলামী রাষ্ট্রের কোন বিকল্প নেই। ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা কয়েম করা এবং এ লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালানো নিছক একটি রাজনৈতিক বিষয় নয় বরং এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দীনি প্রয়োজন ও দায়িত্ব। এ দীনি দায়িত্ব এড়িয়ে চাওয়া বা একে খাটো করে দেখার কোন অবকাশ নেই্ অথবা রাজনীতি বলে এ থেকে নিস্পৃহ থাকারও অবকাশ নেই ইসলামী শরীয়তে।
ইসলামী রাষ্ট্রের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আমরা বুঝতে পারি হিজরতের সময় আল্লাহ তাআলা নবী মুহাম্মদ সা: কে যে, দোআ শিক্ষা দিয়েছিলেন তা থেকে আল্লাহর বলেন, আর দোয়া করোঃ হে আমার পরওয়ারদিগার! আমাকে যেখানেই তুমি নিয়ে যাও সত্যতার সাথে নিয়ে যাও এবং যেখান থেকেই বের করো সত্যতার সাথে বের করো। এবং তোমার পক্ষ থেকে একটি কর্তৃত্বশীল পরাক্রান্ত শক্তিকে আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দাও। সূরা বনী ইসরাঈলঃ ৮০
অর্থাৎ তুমি নিজেই আমাকে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা দান করো অথবা কোন রাষ্ট্র ক্ষমতাকে আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দাও, যাতে তার ক্ষমতা ব্যবহার করে আমি দুনিয়ার বিকৃত ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধন করতে পারি, অশ্লীলতা ও পাপের সয়লাব র"খে দিতে পারি এবং তোমার ন্যায় বিধান জারি করতে সক্ষম হই। হাসান বাসরীও কাতাদাহ এ আয়াতের এ ব্যাখ্যাই করেছেন। ইবনে জারীর ও ইবনে কাসীরের ন্যায় মহান তাফসীরকারগণ এ ব্যাখ্যাই গ্রহণ করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিম্নোক্ত হাদীস থেকেও এরি সমর্থন পাওয়া যায়: "আল্লাহ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বলে এমনসব জিনিসের উচ্ছেদ ঘটান কুরআনের মাধ্যমে যেগুলোর উচ্ছেদ ঘটান না"।
এ থেকে জানা যায়, ইসলাম দুনিয়ায় যে সংশোধন চায় তা শুধু ওয়াজ নসিহতের মাধ্যমে হতে পারে না বরং তাকে কার্যকর করার জন্য রাজনৈতিক ক্ষমতারও প্রয়োজন হয়। তারপর আল্লাহ নিজেই যখন তাঁর নবীকে এ দোয়া শিখিয়েছেন তখন এ থেকে একথাও প্রমাণ হয় যে, দীন প্রতিষ্ঠা ও শরীয়তী আইন প্রবর্তন এবং আল্লাহ প্রদত্ত দন্ডবিধি জারী করার জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতা হাসিল করার প্রত্যাশা করা এবং এ জন্য প্রচেষ্টা চলানো শুধু জায়েযই নয় বরং কাংখিত ও প্রশংসিতও এবং অন্যদিকে যারা এ প্রচেষ্টা ও প্রত্যাশাকে বৈষয়িক স্বার্থ পূজা ও দুনিয়াদারী বলে আখ্যায়িত করে তারা ভুলের মধ্যে অবস্থান করছে। কোন ব্যক্তি যদি নিজের জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতা লাভ করতে চায় তাহলে তাকে বৈষয়িক স্বার্থ পূজা বলা যায়। কিন্তু আল্লাহর দীনের জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতা লাভের প্রত্যাশা করা বৈষয়িক স্বার্থ পূজা নয় বরং আল্লাহর আনুগত্যের প্রত্যক্ষ দাবী।

1 টি মন্তব্য: